উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মূল্য, উত্তোলন ও সংশোধন করার নিয়ম

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সকল প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তাদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। সারাদেশের ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীদেরকে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করার লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘসময় ধরে কাজ করে চলেছে। ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং সর্বশেষ ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করছে 9 লাখ 65 হাজার 838 জন ছাত্রছাত্রী।

প্রতিবছর বিভিন্ন কোর্সের ভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রী অর্জন করছেন এবং ডিগ্রী প্রাপ্ত হওয়ার পর তারা দেশের বিভিন্ন কর্ম ক্ষেত্রে যোগদান করেছেন। তবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালে অনেক শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন থাকে যে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মূল্য কেমন অর্থাৎ এ সার্টিফিকেট ব্যবহার করেছে সরকারি বেসরকারি চাকরিগুলোতে আবেদন করতে পারবে কিনা। আপনাদের অবগতির জন্য বলতে চাই যে আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে সার্টিফিকেট পেয়ে থাকি তা আমাদের চাকরি ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে।

আপনি যখন একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবেন তখন সেখানে আপনাকে আপনার এসএসসি এইচএসসি সার্টিফিকেট প্রদান করা লাগে এর পাশাপাশি আপনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে থাকলে অনার্স মাস্টার্স সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। বিভিন্ন সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরি গ্রুপে যোগদান করার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের গুরুত্ব রয়েছে যার কারণে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট আপনার কর্মক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সে তথ্যটি জানা উচিত। এ কারণে আপনাদের মনে এখন দ্বিধা রয়েছে যে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেটের মূল্য কেমন এবং এবং এর সার্টিফিকেট আপনি কোন কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন সে সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য হলেও আমাদের পুরো আর্টিকেলটি করুন।

বাউবি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মূল্য

এই পৃথিবীতে অর্থ দিয়ে সবকিছু পাওয়া গেলেও আপনি কখনোই শিক্ষা ক্রয় করতে পারবেন না। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেটের মূল্য বলতে এখানে অর্থ দিয়ে তা ক্রয় করাকে বোঝানো হয়নি। শিক্ষার যে গুণগত মান রয়েছে এবং এই শিক্ষাই নিজেকে শিক্ষিত করে আপনি কর্মক্ষেত্রে তা কতটুকু প্রয়োগ করতে পারছেন সেটির ভিত্তিতেই একটি সার্টিফিকেটের মূল্য নির্ধারণ করে। অর্থাৎ একটি সার্টিফিকেট আপনার কর্ম ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা পালন করবে এবং আপনি এই সার্টিফিকেট দেখানোর পর যে কোম্পানি অথবা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে চলেছেন তারা কতটুকু মর্যাদা দেবে সেটি বোধ হয় সার্টিফিকেটের মূল্য।

আজকে আমরা আপনাদের সাথে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মূল্য সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করতে চলেছি। আপনাদের অবগতির জন্য বলতে চাই যে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে তাদের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে 12 টি স্থানে নিজেদের শাখা চালু করেছে এবং উপ আঞ্চলিক কেন্দ্র মোট ৮০ টি রয়েছে। অন্যদিকে মোট 1550 অধ্যায়ন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষা প্রদান করা হয়। আপনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন একটি কেন্দ্র থেকে অধ্যয়ন করলে অবশ্যই সেখানে আপনি ডিগ্রি প্রাপ্ত হওয়া মাত্রই আপনাকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

এসএসসি সার্টিফিকেট সাধারণত যারা দুই বছর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষায় যথাযথভাবে উত্তীর্ণ হতে পারেন তাকে তিন মাসের মধ্যেই সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট প্রদান করে আপনি পরবর্তীতে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবেন অর্থাৎ নতুন কলেজে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার এসএসসি সার্টিফিকেট উত্তোলন করে অবশ্যই সেটি জমা দিতে হবে।

এইচএসসি সার্টিফিকেটের মূল্যবোধে আপনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল অধ্যায়ন কেন্দ্র রয়েছে সে সকল কেন্দ্র থেকে যদি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত জন্য হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকেন তাহলে আপনাকে পরীক্ষায় পাশ করার পর একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন সেখানে যোগাযোগ করলে আপনি চাইলে তিন মাসের মধ্যেই আপনার সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে পারছেন। আবার অনেকেই মনে করেন যে এই সার্টিফিকেট তারা অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করেছে যার কারণে যারা এখান থেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার লক্ষ্যে ভর্তি হয়েছেন তারা অবশ্যই এই ডিগ্রীগুলো কমপ্লিট করার পর তাদেরকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সার্টিফিকেট প্রদান করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অনার্স ডিগ্রি অথবা মাস্টার্স সম্পূর্ণ করতে হবে। অতঃপর নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন দেখানোর মাধ্যমে সঠিকভাবে আপনার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সার্টিফিকেট উত্তোলন করার ক্ষেত্রে আপনার থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ নেওয়া হতে পারে।

biu-cer

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট উত্তোলন

অনেকেই রয়েছেন যারা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট কোথা থেকে উত্তোলন করবে এই তথ্যটি জানতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে সার্টিফিকেট উত্তোলন করা অনেকটাই সহজ। আপনি আপনার নিকটস্থ যেকোনো আঞ্চলিক কেন্দ্রে অথবা অধ্যায়ন কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন সেখানে যাওয়ার সময় অবশ্যই আপনার রেজিস্ট্রেশন কার সঙ্গে নিয়ে যাবেন। অথবা সেখানে যে সকল কর্মকর্তা রয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন তারা আপনাকে আপনার থেকে বেশ কিছু তথ্য জানতে চাই যেমন আপনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর সেখানে দেওয়া মাত্রই আপনি সেটি খুব সহজে পেয়ে যেতে পারেন। তাই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট উত্তোলন করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের জটিলতা নেই।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন

অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা সার্টিফিকেট পাওয়ার পর দেখেন যে তাদের সার্টিফিকেটের যে নাম রয়েছে অথবা পিতা-মাতার নাম ভুল হয়ে থাকে। একটু সার্টিফিকেট আপনার বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন হয় যার কারণে সেটা অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটে ভুল হয়ে থাকলে আপনাকে নিকটস্থ আঞ্চলিক কেন্দ্রে একটি আবেদন পত্র লিখতে হবে এবং আবেদনপত্রের সাথে অবশ্যই আপনার যে নামটি সংশোধন করতে চান সে নামটি উল্লেখ করবেন। অতঃপর আবেদনপত্র সঠিকভাবে কর্মকর্তার কাছে জমা দিন। আপনাকে ৫০০ টাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে ব্যাংক ড্রাফ্ট করতে হবে এবং সেই টাকা দেওয়ার পর ব্যাংক ড্রাফের কাগজ টি কর্মকর্তার কাছে জমা করুন। আপনি ছয় মাসের মধ্যেই নতুন করে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন অর্থাৎ আপনার নাম সংশোধন হয়েছে।

1 thought on “উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মূল্য, উত্তোলন ও সংশোধন করার নিয়ম”

Leave a comment